Friday, September 19, 2014

কলমিলতা

প্রায় এক যুগ পর এক বন্ধু আজ ফোন করেছে। ফোনটা ধরে আমি বললাম, কে?
ও পাশ থেকে একটা মেয়েলী কন্ঠস্বর ভেসে এলো।
"কিরে স ম (আমার নামের পদবীর সংক্ষিপ্ত রুপ) কেমন আছিস? "
হঠাৎ করে এরকম সম্ভোধন শুনে আমার বুকের মধ্যে ছ্যাৎ করে উঠলো। এ নামে আমাকে তো এখন কেউ ডাকে না। আজ থেকে ১২ বছর আগেই যা আমি পেছনে ফেলে এসেছি সেই সম্বোধন!  আমি তো রীতিমতো অবাক।
বললাম, কে আপনি??
ও পাশ থেকে মিষ্টি সুরে অচেনা রমনী বলে উঠলো , "ভুলেই যখন গেছিস তখন আর পরিচয় দিয়ে লাভ কি? "
আমি বললাম,  কিন্তু কে? আপনি যে আমার পূর্ব পরিচিত এবং অনেক আগের চেনা কোন মানুষ তা আমি বুঝতে পারছি।তবে.... ঠিক ধরতে পারছি না।"
মেয়েটি অত্যন্ত নম্র ভাবে,সুললিত কন্ঠে, মিষ্টি করে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, "বলতো কে হতে পারি? "
আমি অবশ্য সেটাইঈ এতক্ষন ধরে ভাবছি, আসলে কে এই মেয়ে!কন্ঠ চেনা না হলেও কথার ধরন আর সুর আমাকে ইতিমধ্যে ১২ বছর পেছনে নিয়ে গেছে।একবার ভাবছি, হয়ত শারমিন হবে না হলে...
উমমম....সেলিনা,আকলিমা,কনা,ফৌজি,সাবিনা,রুনা,সালমা আর কে কে যেন ছিলো!!
উমমম..... এই মুহূর্তে এই কটা ছাড়া আর কারো নাম মনে হচ্ছে না।
তাই নিজের ভেতরে সব কিছু চাপা দিয়ে কিছুটা চেনার ভান আর কিছুটা কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "কি রে তুই?  তুই কুমিল্লার সেই সুন্দরী না?? "
আসলে সত্যি কথা বলতে কি আমি জাষ্ট একটু আন্দাজ করে বললাম।কারন স ম নামে আমার প্রাইমারির বন্ধু বান্ধবী ছাড়া কেউ কখনো ডাকত না।আর আমার ক্লাসের সবগুলো মেয়েঈ কম বেশি সুন্দর ছিলো।তাই সুন্দরী বলাটা বেশি কিছু না।
আমি মেয়েটি কে চিনতে পেরেছি, এই ভেবে ও পাশ থেকে ও আনন্দে আটখানা। আসলে তো এখনো আমি অন্ধকারেই আছি তা কি করে বলব!
ও পাশ থেকে বলে চলল, কিরে তাহলে তেলাপোকা টাকে ধরে ফেলেছিস। "
ওহ মাই গড!এ আমি কার সাথে কথা বলছি?  এ যে আমাদের কলমিলতা।ক্লাসের সবচেয়ে স্মার্ট, বুদ্ধিমতী, চটপটে মেয়ে।আদর করে আমরা ও কে তেলাপোকা বলে ডাকতাম।
ওরা অবশ্য আমার আর শাহরিয়ারের(আমার বন্ধু) একটা একই ধরনের নাম দিয়েছিল।কিন্তু প্রেস্টিজ পাংচার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার কারনে নামটা প্রকাশ করলাম না।

আমি এতক্ষনে ওকে যখন চিনতে পারলাম তখন আমার মধ্যে বিশ্বজয়ের আনন্দ।
বললাম, কি রে তুই আমার নাম্বার কই পেলি?  কি করছিস এখন?  কোথায় তুই?  বিয়ে করছিস না কি? হাসব্যান্ড-বাচ্চা কাচ্চা ইত্যাদি।।।।

হঠাৎ করেই যেন দু জন প্রাইমারি স্কুলের বারান্দায় ফিরে গেলাম।আমি যেমন উতলা হয়ে ওকে জিজ্ঞাসা করছি তেমনি ও কোনটা রেখে কোনটা বলবে ভাবে পাচ্ছে না।
বলা শুরু করল," আর বলিস না, পুরোনো ডায়রি খুঁজতে গিয়ে তোর ঠিকানা পেলাম। তারপর তোর নাম ধাম দেখে ভাবলাম, নিশ্চয় তুই ইন্টারনেট ইউজ করিস তাই গুগলে তোর নাম লিখে সার্চ করলাম।
ব্যাস, তোর ব্লগ এর লিংক পেলাম।গুগল + এ তোর ছবি দেখলাম।
এই তুই না অনেক সুন্দর হয়ে গেছিস রে!!"
ওর সামনা সামনি এই অহেতুক প্রশংসায় আমি একটু লজ্জাই পেলাম।
বললাম, রাখত। আমি আবার সুন্দর??
তারপর বল।
আমার কলমিলতা বলা শুরু করল,"তারপর আর কি! এই যে ব্লগ থেকে ফেসবুক লিংক পেলাম। একটু সন্দেহ ছিল কিন্তু স্কুলের নাম দেখে শিওর হলাম। "
"তারপর ফোন নম্বরটা নিয়ে এই যে ফোন দিলাম। "
বললাম, "ও আচ্ছা। যাক গুগলকে থ্যাংকস। ও না হলে হয়ত কোন দিন আর কথা হত না।"

মনে মনে ভাবলাম,  সত্যি প্রযুক্তি কতই না উপকারে আসে।আহা!!  শুধু ব্যবহারের সদ্বিচ্ছা থাকতে হবে।আমরা এর ভালো টা নেব না খারাপটা নেব।
যাই হোক, তারপরে অনেক কথা হল। ছেলে বেলার দুষ্টোমি থেকে শুরু করে বড়বেলার  পাগলামি। সব সব কিছু।।
যাক, ১২ বছর পরে এমন কারো সাথে কথা হবে ভাবতেও পারিনি কখনো।

থ্যাংকস গুগল, থ্যাংক্স ফেসবুক।।
(দুঃখিত, লিখতে লিখতে কিছু লিখা বাদ পরে গেল।)

www.facebook.com/swopnonil

আমি বাবু-সাব নি

আজ দুপরে বগুরার সাতমাথা থেকে গেলাম নিউ মার্কেট  সেখান থেকে কিছু কাগজ পত্র কিনে ফতেহ আলী ব্রীজের কাছে এসেছি মাত্র।দেখি এক বেচারা ভ্যান চালক মোটামুটি ১৭-১৮ মণ লোড নিয়ে ফতেহ আলী ব্রীজের উপর ঊঠার চেষ্টা করছে।কিন্তু এত ভারী মালামাল নিয়ে উঠতে গিয়ে বার বার তার পা হরকাচ্ছিল। পেছনে অন্য এক ভ্যানওয়ালা (যে নিজেও ঐরকম ভার নিয়ে ভ্যান চালাচ্ছিল)চেষ্টা করছিল তাকে ধাক্কা দিতে। আসে পাশে অনেক প্যান্ট শার্ট পড়া ভদ্রলোক আছেন, তারা দেখছেন, কেউ দয়া বশত মুখে চুক চুক শব্দ করছেন কিন্তু ভ্যান টাকে ধাক্কা দেয়ার কাজটুকু মান-সন্মানের ভয়ে করছেন না। হায় রে মান-সন্মান!!
আমি বেচারা কৃষকের ছেলে।কৃষকের কষ্ট না বুঝলেও  অনুভব করতে পারি। আর আমার পোশাক-আশাকের দাম্ভিকতাও নেই।ঐ রকম মান-সন্মান হারানোর ভয়ও নেই।তাই একটু কষ্ট করে ধাক্কা দিয়ে ব্রীজের উপরে তুলে দিলাম।।  
চলে আসার সময় ভ্যানওয়ালা ঘামে ভেজা ক্লান্ত মুখে হাসির রেখা টেনে বলল,"ধন্যবাদ ভাই"।
তার মুখ থেকে ওই "ধন্যবাদ" শব্দটাই আমার জন্য যথেষ্ট  ছিলো।

www.facebook.com/swopnonil